কম্বল ফোঁড় (পাঠ ১০)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - চারু ও কারুকলা বিভিন্ন প্রকার শিল্পকর্ম | - | NCTB BOOK
91
91

গায়ের শাল, কম্বল ইত্যাদির প্রান্ত সেলাই করার জন্য এই ফোঁড় ব্যবহার করা হয়। কম্বল ফোঁড় খুবই সহজ। অনেকটা বোতাম ঘর ফোঁড়ের মতো

সার্টিন ফোঁড়

সার্টিন ফোঁড়ও বেশ সহজ। ছবি দেখেই আশা করি আমরা করতে পারব। এই ফোঁড় পাশাপাশি তুলতে হয়।

হেরিংবোন ফোঁড়

এই ফোঁড় অনেকটা ব্রুস ফোঁড়ের মতো। ক্রস ফোঁড় যেভাবে করতে হয়, এই ফোঁড়ও অনেকটা সেভাবেই করব। ছবি দেখে আশা করি সহজেই ফোঁড়টি আমরা বুঝতে পারব।

ফেলনা জিনিস দিয়ে শিল্পকর্ম

কোনো কাজে লাগবে না ভেবে জিনিস আমরা ফেলে দিই, সেগুলোকেই বলি ফেলনা জিনিস। একটু চিন্তা করে নিজের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসব ফেলনা জিনিস দিয়েও আমরা অনেক সুন্দর-সুন্দর শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারি। প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় এমন অনেক জিনিসই আমাদের আশপাশে ছড়িয়ে আছে যা সাধারণভাবে আমাদের চোখে ফেলনা। আমরা খুব একটা খেয়াল করি না, তেমন নজরে পড়ে না এমন সব জিনিস দিয়েও অনেক সুন্দর-সুন্দর জিনিস তৈরি করা যায়। সুন্দর কিছু তৈরি করার প্রবল ইচ্ছা ও কল্পনা শক্তি এ দুটিকে কাজে লাগালেই আমরা গাছের শুকানো ডালপালা, পাটকাঠি, কাঠের টুকরা ইত্যাদি ফেলনা জিনিসকে রূপে-রসে ভরে দিয়ে প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় শিল্পকর্মে রূপায়িত করতে পারি। এমনি দু-একটি শিল্পকর্মের কথা জেনে নিই।

শুকনো ডালে কাগজের ফুল

বরই গাছের ছোটো একটা কাঁটাওয়ালা ডাল নিই। অন্য কোনো গাছের ডাল নিলেও চলবে, তবে তাতে কাঁটা থাকতে হবে। সাদা কিংবা হালকা হলুদ রঙের ঘুড়ির কাগজ নিয়ে ২.৫০ সিমি. চওড়া ফালি করি। কাগজের ফালি তিন চার ভাঁজ করে ২.৫৪ সেমি. চওড়া ও ১৫ সেমি. লম্বা করি। এবার কাঁচি দিয়ে কাগজের ফালির একপাশ চিকন-চিকন করে কাটি, অপর পাশে মোটামুটিভাবে ৬ সেমি. মতো জায়গা আগাগোড়া জোড়ানো থাকবে, যেন কাটা না হয়। এভাবে কাটা কাগজের ফালিটি কিছুটা চিরুনির মতো মনে হবে। কাগজের ফালি কাটা হয়ে গেলে ভাঁজ খুলে নিই।

পাটকাঠির মাথার সরু অংশ বেছে কয়েক টুকরো পাটকাঠি নিই। ধারালো ছুরি বা পুরানো ব্লেড দিয়ে এক টুকরো পাটকাঠির এক মাথা সমান করে কাটি। এবার চিরুনির মতো কাটা কাগজের ফালির জোড়ানো পাশে ময়দার আঠা লাগিয়ে পাটকাঠি সমান করে কাটা মাথার ৩৫ সেমি. পরিমাণ জায়গায় কাগজের জোড়ানো অংশের মাথা বসিয়ে পেঁচিয়ে যাই। এক পেঁচের ওপর অন্য পেঁচ পড়বে। এভাবে পাঁচ-ছয় পেঁচ দওয়ার পর কাগজের ফালি ছিঁড়ে আলাদা করে নিই। এবার ধারালো ছুরি বা ব্লেড দিয়ে কাগজের পেঁচ ঘেঁষে কাগজ সমেত পাটকাঠির মাথাটি কেটে নিই। এবার পাটকাঠির টুকরোয় পেঁচানো কাটা কাগজের সরু মাথাগুলো চারদিকে সমান করে ছড়িয়ে দিই। কী সুন্দর ফুল হয়ে গেল!

এভাবে একই পাটকাঠির মাথায় বার বার চিরুনির মতো কাটা কাগজ পেঁচিয়ে কেটে নিয়ে একটির পর একটি ফুল তৈরি করতে পারি। এক টুকরো পাটকাঠি শেষ হয়ে গেলে আরেক টুকরো নেব। প্রয়োজনীয় পরিমাণে ফুল তৈরি হয়ে গেলে শুকনো ডালের এক একটি কাঁটায় এক একটি ফুল গেঁথে বসিয়ে দিই। ডালের কাঁটার চেয়ে ফুলের নিচের পাটকাঠির টুকরো অনেক নরম, তাই গাঁথতে কষ্ট হবে না। সমস্ত ডালটি ফুলে ফুলে ভরে দিই। কত সুন্দর লাগছে। ছোটো একটা ফুলের টবে মাটির মধ্যে ফুলের ডালটি পুঁতে একটা মানানসই জায়গায় রাখি। দূর থেকে দেখি সবাই যখন আসল ফুল বলে ভুল করবে তখন আমাদের কেমন আনন্দ হবে।

মোজাইক ছবি

৮-১১ ইঞ্চি কাপড় ও আইকা আঠা নিই। কাপড়ের ওপর একটি পাখি আঁকি। এরপর বিভিন্ন রঙের কাগজ লাগিয়ে কাপড়ের ফুলের ওপর একটার পর একটা ঠিকভাবে সাবধানে লাগাই। পাখির বাইরে অন্য রঙের টুকরো লাগাতে হবে। দুদিন এভাবে রেখে দিই। পরে ফ্রেম করে ঘরে টানাতে পারব। এটি তৈরি করতে খুব আনন্দ পাব।

এভাবে ইচ্ছে করলে রঙিন কাগজ দিয়েও একইভাবে যেকোনো ফুল, হাতি বা যেকোনো মোজাইক ছবি তৈরি করতে পারব।

আলু ও ঢ্যাঁড়শ কেটে রঙে ডুবিয়ে ছাপচিত্র

আলু, ঢ্যাঁড়শ অথবা করলা কেটে যেকোনো রং দিয়ে ছাপ দেওয়া যায় (বৃত্তের নমুনা অনুসারে)। আলু, ঢ্যাঁড়শ ও করলা অথবা ছাপ দেওয়া যায় এ ধরনের যেকোনো তরকারি কেটে এবং সেটি দিয়ে কাগজে রঙের ছাপ দিয়ে সুন্দর নকশা তৈরি করা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন নতুন ধরনের জিনিস দিয়ে ছাপ দিলে সুন্দর-সুন্দর প্যাটার্ন তৈরি করা যায়।

প্রয়োজনীয় তথ্য

পানি দিয়ে গোলানো যে কোনো রং এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে। এই ছবিতে আলু জাতীয় কোনো নরম বস্তু প্রথমে মসৃণ করে টুকরো কেটে নিয়ে তারই একাংশ গর্ত করে খুদে নিয়ে কীভাবে ছাপানোর উপযোগী সাময়িক ব্লক করে নিতে হবে তা দেখানো হয়েছে। ঐ খোদাইকৃত অংশে রং লাগিয়ে তা দিয়ে নির্দিষ্ট কাগজে বা কাপড়ে ছাপ মারলেই চমৎকার নকশার সৃষ্টি হবে।

ফেলনা কাগজের মুখোশ তৈরি

ফেলে দেয়া অনেকগুলো কাগজ জোগাড় করি। কাগজগুলো ১ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখি। আটার লেই তৈরি করি (জ্বাল দিয়ে)। এবার কাগজ পানি থেকে চিপড়িয়ে তুলে নিই। আটার লেইয়ের সাথে কাগজের জিনিসগুলো মিশিয়ে নিই।

এতে মন্ড তৈরি হবে। মন্ডের সাথে একটু তুঁত মিশিয়ে নিতে হবে। তা না হলে পোকায় কেটে ফেলবে।

অনেকগুলো শুকনো কাগজ, দড়ি বা সুতলি দিয়ে গোল করে মাঝারি বলের আকার তৈরি করি। এবার বলের উপরের দিকে মাটির মতো কাগজের মণ্ড দিয়ে যেকোনো বিড়াল বা মানুষের মুখের আকৃতি করি। দুই-তিন দিন শুকাতে দিই। শুকিয়ে গেলে নিচ থেকে কাগজের বলটি বের করে ফেলি। মানুষ বা বিড়ালের মুখোশ তৈরি হয়ে গেল। এবার রং করি। (ছবি দেখে করতে পারব)

Content added By
Promotion